Follow Us

Responsive Advertisement

propelller push

Responsive Advertisement

 

Pic:Quora

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই ইউরোপে শুরু হয় এবং ১১ নভেম্বর ১৯১৮ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ৬ কোটি ইউরোপীয়সহ আরো ৭ কোটি সামরিক বাহিনীর সদস্য ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম এই যুদ্ধে একত্রিত হয়। এটি ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাতের একটি এবং এর ফলে পরবর্তী সময়ে এর সাথে যুক্ত দেশগুলোর রাজনীতিতে বিরাট পরিবর্তন হয়। অনেক দেশে এটি বিপ্লবেরও সূচনা করে।

১৯১৪ সালের ১৮ জুন বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো শহরে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্ডিনান্ড এক সার্বের গুলিতে নিহত হন। অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সার্বিয়াকে দায়ী করে এবং ওই বছরের ২৮ জুলাই সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এ যুদ্ধে দু'দেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ে। এতে যোগ দিয়েছিল সে সময়ের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী সকল দেশ। এভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) সূচনা হয়। তবে অস্ট্রিয়ার যুবরাজের হত্যাকাণ্ডই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একমাত্র কারণ ছিল না। উনিশ শতকে শিল্পে বিপ্লবের কারণে সহজে কাঁচামাল সংগ্রহ এবং তৈরি পণ্য বিক্রির জন্য উপনিবেশ স্থাপনে প্রতিযোগিতা এবং আগের দ্বন্দ্ব-সংঘাত ইত্যাদিও প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের কারণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে একপক্ষে ছিল উসমানীয় সাম্রাজ্য, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, জার্মানি ও বুলগেরিয়া। যাদের বলা হতো কেন্দ্রীয় শক্তি। আর অপরপক্ষে ছিল সার্বিয়া, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জাপান, ইতালি, রুমানিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যাদের বলা হতো মিত্রশক্তি।


মিত্র শক্তিঃ

  •  ব্রিটিশ সাম্রাজ্য
  •  ফ্রান্স
  •  রাশিয়া
  •  সার্বিয়া
  •  বেলজিয়াম 
  •  মন্টিনিগ্রো
  •  জাপান
  •  ইতালি
  • United States
  • রোমানিয়া
  •  হেজাজ
  •  চীন 
  •  গ্রিস


অক্ষ শক্তিঃ

  •  জার্মানি 
  •  অস্ট্রিয়া 
  •  অটোমান 
  •  বুলগেরিয়া


প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নব্বই লক্ষ যোদ্ধা ও এক কোটি বিশ লক্ষ নিরীহ মানুষ নিহত হয়। প্রায় এককোটি সৈন্য এবং দুই কোটি দশ লক্ষ সাধারণ মানুষ আহত হয়, এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ছিল এক লক্ষ ষোল হাজার পাঁচশত ষোল জন। চারটি সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। রোমানভ সাম্রাজ্য বা রুশ সাম্রাজ্য ১৯১৭ সালে, জার্মান ও অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্য ১৯১৮ সালে এবং উসমানীয় সাম্রাজ্য ১৯২২ সালে। অস্ট্রিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং তুরস্ক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা অধিকাংশ আরব এলাকা ব্রিটিশ ও ফরাসি সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। ১৯১৭ সালে বলশেভিকরা রাশিয়ার এবং ১৯২২ সালে ফ্যাসিবাদীরা ইতালির ক্ষমতায় আরোহণ করে। এ যুদ্ধের অন্য ফল হলো: ইনফ্লুয়েঞ্জায় বিশ্বব্যাপী ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়।

১ম বিশ্বযুদ্ধের ফলে ইউরোপের প্রায় সমস্ত দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পুরোপুরি বিনষ্ট হয়ে যায়। বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইউরোপ জুড়ে গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটে। মহা শক্তিশালী অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে। আরব রাষ্ট্রগুলো তুরস্কের অধীনতা ছেড়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। খোদ তুরস্কে কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটে এবং তুরস্কে একটি প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়।

নিজের শক্তির বড়াই করে বিশ্বযুদ্ধ বাঁধানো জার্মানিকে জবরদস্তি চাপিয়ে দেয়া হয় ভার্সাই চুক্তি। জার্মানি ইউরোপে ২৫,০০০ বর্গমাইল এলাকা হারায়, তার  বাণিজ্য বন্দরগুলো বিজয়ী মিত্রশক্তিদের জন্য খুলে দেয়া হয়। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও বেলজিয়ামকে বিশাল পরিমাণ কয়লা, রেল ইঞ্জিন ও মোটর গাড়ি দিতে হয় জার্মানিকে। সেই সাথে যুদ্ধাপরাধের দায় হিসেবে তার উপর চাপে ক্ষতিপূরণের বিশাল বোঝা। জার্মানিকে সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়ার সকল ব্যবস্থা গৃহীত হয়। কিন্তু এই প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা জার্মানিকে চিরতরে পঙ্গু করতে পারেনি, বরং এনেছিল আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ।

Post a Comment